কালো মানুষের
দেবতা উয়েন্দে পাখিদের ডেকে বললেন, ‘তোমরা বেশ বন্ধনহীন জীবন কাটাচ্ছ। আর সব সময়
চাইলেই শস্যদানা খুঁজে পাচ্ছ। পোকামাকড় খেয়ে বেশ তো মজায় আছো। তোমরা তোমাদের ঠোঁটে
নিজেদের গান নিয়ে এসেছো। মাটিতে থাকার চাইতে আকাশেই তো বেশি সময় তোমরা উড়ে বেড়াচ্ছ
স্বপ্নের ভেলা ভাসিয়ে'।
ঘটনাটি সত্য।
কিন্তু একদিন পাখিরা শুনতে পেল, লোকজন সমাগত দারুন দুর্ভিক্ষের কথা বলাবলি করছে।
সেই সব কথা শুনে তারা ভয় পেয়ে গেল। কারণ, আর দানাপানি তাদের খাবার জন্য হয়তো নাও
জুটতে পারে। তাদের নেতা গোছের তিনজন- উঠপাখি, সিন্ধু সারস আর গাঙচিল অন্য সব পাখির
সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিল ঠিক মানুষ যেমন ফসল ফলায়, তেমনি তারাও একটি ক্ষেত
বেছে নিয়ে মানুষের মত চাষবাস করবে।
সেই সময় নিজ্যের*
নামে দেশে বাস করত এক বিশাল জন্তু। ঠিক হাতির মত বিরাট তার শরীর। হিপোপোটমাসের মত
সে জলেই থাকত। কিন্তু শয়তানিতে তার জুড়ি মেলা ভার। ক্ষিদে থাকুক বা না থাকুক হাতের
সামনে যা কিছু পেত গোগ্রাসে গিলে ফেলত। পাখিদের ক্ষেতটা নিজ্যের দেশ থেকে
বেশি দূরে ছিল না। কারণ, সেখান থেকেই পাখিদের
ক্ষেতের মাটিতে জল আসত। পাখিরা যখন সেখানে চাষবাস করার জন্য জড় হত, তারা প্রচণ্ড
চিৎকার চ্যাঁচামেচি করত। একদিন এই প্রকাণ্ড জন্তু, জুগুলুগুবাম্বা, তাদের আওয়াজ শুনতে
পেল। বড় বড় পা ফেলে সে এসে দাঁড়ালো। আর তার পা’র আঘাতে মাটিতে তৈরি হল ছোট ছোট হ্রদ।
কারণ, তার পা থেকে গড়িয়ে পড়ছিল বিশাল জলধারা।
'শুভোদিন, পাখি
ভাইয়েরা'। জলদগম্ভীর কণ্ঠে বজ্রনির্ঘোষ এল –'শুভদিন! কী করছ তোমরা এখানে?'
পাখিরা চমকে
উঠে নমস্কার জানাল। ছোট ছোট পাখিরা বড়দের পেছনে লুকিয়ে পড়ল। লম্বা ঠোঁটের শুটকো
ইবিস পাখি তো কেঁদেই ফেলল। কারণ, সে জানত যে নীল নদের কুমিররা এই দানবের চাইতেও কম
ভয়ঙ্কর।
'এই, তোদের মধ্যে সর্দার কে? কে তোদের এখানে শাসন করে, মানে চালনা করে?' জুগুলুবাম্বা জানতে চাইলো।
উটপাখি ভদ্রভাবে তাকে সালাম জানালো।
'তুই'?
জুগুলুগুবাম্বার মুখ থেকে এই কথা বেরোতে না বেরোতে উটপাখিটাকে খেয়ে ফেললো।
কিন্তু উটপাখিটা ছিল অসমসাহসী। সে জুগুলুবাম্বার মুখের গহ্বর থেকে দৌড়ে তার পেটের
মধ্যে চলে গেল আর পায়ুর মধ্যে দ্রুত ঢুকে পেছন দিয়ে বেরিয়ে এল। বেরোনোর সময় পা দিয়ে
কষে তাকে এক লাথি মারলো উটপাখি। দৈত্যটা আবার ঘুরে দাড়ালো এবং উটপাখিটাকে নতুন করে
খেয়ে ফেললো। অন্যান্য পাখিদের অবাক হওয়া চোখের সামনে উটপাখিটি একই কায়দায় বেরিয়ে
এল। প্রতিবার জুগুলুবাম্বা তাকে খেয়ে ফেলছে আর তাকে পেছনে আচ্ছা করে লাথি মেরে উটপাখিটি বেরিয়ে পড়ছে।
পাখিরা দেখলো, যত বড় দানবই সে হোক না কেন, তাকে আর ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। তারা
সবাই মিলে এক সাথে জুগুলুগুবাম্বার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে মেরে ফেললো। তাই না দেখে
অন্যান্য দৈত্যগুলো ভয়ের চোটে আর জল থেকে উঠলোই না।
তারা পৃথিবীর কোনও প্রাণীকে আর ভয় দেখাতে পারলো না। দেবতা উয়েন্দে, যিনি তাদের
সৃষ্টি করেছেন, তাঁর আদেশ স্মরণ করে পাখিরা বলে উঠলো, ‘মুক্ত, স্বাধীন ও হালকা হও। তোমরা তোমাদের সঙ্গে নিয়ে এসো শুধুই সংগীতের
মুর্চ্ছনা। আমিই যোগাবো তোমাদের আহার’।
আর এই দুঃসাহস দেখাবার পুরস্কার হিসেবে উটপাখির গলাটি হয়ে গেল লম্বা আর পায়ের
পাতাগুলি এত্তো বড়!
*নাইজেরিয়ার পাশে ফরাসিভাষী একটি মুসলিম দেশের নাম ‘নিজ্যের’
********
Comments
Post a Comment