Skip to main content

জুগুলুগুবাম্বা, চতুর্থপর্ব

ব্যবসায়ীরা 

ব্যবসায়ী? সেরকম কোন কথাই ছিল না সেযুগে। বেচা-কেনা এবং টাকা রোজগারের জন্য একজন লোক তার মগজের চিন্তাকে রূপ দিয়ে তার পুরো পরিবারকে গোটা দুনিয়ার কাছে পাঠিয়েছিল। এই কাহিনীটি বেশ লম্বা। শোনো তবে... 

নিজ্যেরএ (নাইজিরিয়ায়) কোন এক কৃষকের একটি মেয়ে ছিল। তার স্বভাব ছিল মিষ্টি, চামড়া ছিল সিল্কের মত, চোখ কালো হরিণের মত। এত সুন্দর হাসিখুসি শিশু যে ভাবাই যায় না। কৃষক মেয়েকে কোন গরিব লোকের হাতে তুলে দিতে চাইত না। একজন বড়লোক জামাই পাওয়ার জন্য সে কি করেছিল সেই গল্পটা শোন তাহলে... 
সে তার কন্যাকে একটা নাম দিয়েছিল। কিন্তু কেউই, কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোক এমনকি কোন প্রাণীও জানত না সেই নাম। 
এরপর সে বলল, যে আমার মেয়ের নাম খুঁজে বার করতে পারবে, সেই হবে আমার ভাবী জামাই। সমস্ত দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে দলে দলে যুবকেরা কৃষকের জামাই হওয়ার আকাঙ্খায় কন্যা ও তার পিতার জন্য উপহার বগলদাবা করে একে একে হাজির হতে লাগলো। সারাদিন ধরে তাদের চলল মদ্যপান আরা হাসাহাসি। পৃথিবীতে জন্মাবার পর যতগুলি নাম তারা শিখেছে এক এক করে সবগুলি তারা বলে গেল। একজন যখন বলছে তখন অন্যরা মজায় হাসিতে গড়িয়ে পড়ছে একে অন্যের ঘাড়ে। কিন্তু কন্যার লুকানো নাম কেউ খুজে বার করতে পারল না। দেশের সমস্ত মানুষ কৃষক ও তার মেয়ের লুকানো নামের মেয়ের গল্পে মুখর। 
তবু একদিন এক সুদর্শন, মার্জিত যুবক ঘুরতে ঘুরতে সেখানে কৃষক কন্যার পাণিপ্রার্থী হয়ে এলো। উঠানের চত্ত্বরে সে এসে বসল আর সুন্দরীর সম্ভাব্য নাম খোঁজা শুরু করল। রাত নেমে এল। শেষ বলের গাছের পাতায় আগুন ধরে গেল, কিন্তু তার নাম খুঁজে পাওয়া গেল না। 
ফলে দুঃখ এসে আগন্তুককে গ্রাস করল। সে তার লতাপাতা আঁকা সবারা টিনের ট্রাঙ্কটি খুলে তার সুটকেস খুঁজল। 
সুটকেসটা খুলে যুবক স্তম্ভিত হয়ে গেল। সেখান থেকে অসম্ভব সুন্দর দলোতিবা পোশাক বেরোতে শুরু করল। একটা তো মিষ্টি সাদা পাখির মত, অন্যগুলি কোনও একটি কালো ঝলমলে দলোতিবা, কোনওটি হাল্কা সবুজ। এত দূর দেশ থেকে সে এসেছিল, হয়তো কারও সাথে বদলাবদলি হয়ে গেছে। 
শেষমেশ, সে এক লম্বাচওড়া গোল মতন আফ্রিকান বস্ত্র পুগুলুগতলি বার করল সুটকেস থেকে। টকটকে লাল রঙের, যার দুটো লম্বা মুখ আছে, কান ঢাকবার জন্য। আর পুরুষরা উপরের অংশটা দিয়ে তাদের মাথা ঢাকে। পোষাকটা দেখে যাতে লোকেরা বুঝতে পারে সে একজন কেউকেটা সর্দার। 
শুনশান নীরবতার মধ্যে যুবকটি জ্বলন্ত আগুনের নিভু নিভু অবস্থা দেখে ভাবল, যে মেয়েটিকে ভালোবেসে সে এতদূরে এসেছে, তার নাম আর সে খুজে পাবে না! 
সুতরাং সে তার মহি কালো রঙের দলোতিবা বস্ত্রটি প্রথমে আগুনে ফেললো। পুড়ে ছাই হয়ে গেল অঙ্গবস্ত্রটি। তারপর দ্বিতীয়টি, তারপর আরও একটি। প্রত্যেকবার যখন সে এক এক করে দলোতিবা আগুনে ছুড়ছিল যে নাম তার মুখে আসছিল সেটাই সে উচ্চারণ করছিল। শেষ পর্যন্ত মাঝরাতে সে তার শেষ কালো বস্ত্রটি নিক্ষেপ করল অগ্নিশিখায় আর বলল, 
‘হাবা’! 
সুন্দরী তার ভাষায় উত্তর দিল, রুমা! অর্থাৎ আমি এখানে। 
উপস্থিত সবাই একসঙ্গে চীৎকার করে উঠলঃ 
কন্যাকে জিতে বাজিমাত করল এই যুবক। 
কোন কথা না বলে আগন্তুক আরও তিনটে সাদা দলোতিবা আগুনে ছুঁড়লো। তারপর সে উঠে দাঁড়াল এবং কৃষকের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। যেমন করে একজন সন্তান তার পিতার দিকেতাকায়। কৃষক তাকে বলল, 
হ্যাঁ, তুমিই জিতেছ আমার মেয়েকে। 
আগন্তুক এগিয়ে গেল সুন্দরীর দিকে, তার মাথায় লাল পুগুলুগুলি চাপিয়ে তাকে অভিবাদন জানালো। 
আর এই সময় তার পিতা ঢ্যাম কুড়কুড় তাম-তাম ঢাকের বাদ্যি বাজাতে লাগল আর বিয়ের উপহার ও ব্যবস্থার প্রস্তুতিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।


একটি ঘোড়াকে লাল চামড়া এবং তামার পোষাকে সাজানো হল জনা দশেক শক্তপোক্ত লম্বাচওড়া গোলাম। মূল্যবান মনিমানিক্য-টাকাকড়ি পিঠে নিয়ে দশটি গাধা, দশটি গরু, দশটি বাছুর এবং জামাকাপড়ের পাহাড়, সাথে নানা চটিজুতোর সমাহার। 
বিয়ের উৎসব হল বিশাল খানাপিনা এবং নানা রকমের পানীয়সহ পাত্র সকাল সকাল যাত্রার জন্য তৈরি হল। তার একত্রযাত্রীবাহিনীর, যাকে ক্যারাভান বলে, তার মাথায় রইল সে এবং তার বিবি। 



এরপর পরের সংখ্যায়......

Comments

Popular posts from this blog

জুগুলুবাম্বা তৃতীয় পর্ব

কুকুরেরা কেন মানুষের বন্ধু হল সুদানের গল্পদাদু তালিদালা তাঁর পশমের টুপিটা তুলে তাঁর হাত মাথার উপর ধীরেসুস্থে বুলিয়ে দিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন। সামনের উঠানে পায়রার মতো সুদানি ছোট ছোট পাখি লাফালাফি করে খেলছিল। তাদের মধ্যে একটা পাখি লাফ দিয়ে ছোট শস্যদানার গামলার উপর বসে মহানন্দে মলত্যাগ করল। ওদিকে ছাই রঙ্গা পোশাক পরে তাঁর বৌ মজাছে শস্যদানা চিবাচ্ছিল। মলত্যাগ করে পাখিটা মাটিতে পা ফেললো। লালটুপি পরা মাথাটি চারদিক ঘুরে দেখে একটা গাছের ডালে উড়ে গেল। অন্যান্য পাখিগুলিও তাঁর দেখাদেখি পেছন পেছন গাছের দিকে উড়ে গেল।

জুগুলুগুবাম্বা

কালো মানুষের দেবতা উয়েন্দে পাখিদের ডেকে বললেন, ‘তোমরা বেশ বন্ধনহীন জীবন কাটাচ্ছ। আর সব সময় চাইলেই শস্যদানা খুঁজে পাচ্ছ। পোকামাকড় খেয়ে বেশ তো মজায় আছো। তোমরা তোমাদের ঠোঁটে নিজেদের গান নিয়ে এসেছো। মাটিতে থাকার চাইতে আকাশেই তো বেশি সময় তোমরা উড়ে বেড়াচ্ছ স্বপ্নের ভেলা ভাসিয়ে'।