Skip to main content

জুগুলুগুবাম্বা - দ্বিতীয় পর্ব


আকাশের কিংবদন্তী

এমন একদিন ছিল যখন আকাশকে হাত দিয়ে ছোঁয়া যেত। তখন আকাশ ছিল মাটির কাছাকাছি। ঠিক দেবতা উয়েন্দের মত। কারণ, আকাশ আর উয়েন্দে তো একই মানুষ। যে জগত তিনি তৈরী করেছেন উয়েন্দে ছিলেন তার খুবই কাছে।
যেমনভাবে অন্য প্রাণী এবং গাছপালা, তরুলতা পৃথিবীর জিনিসপত্রের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে, মানুষও তেমনি আকাশ খেয়ে বেঁচে থাকত। তার আত্মা এবং পেটের যখন খিদে পেত, তখন সে হাত উপরে তুলত, এক টুকরো আকাশ ছিঁড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলত। তার ফলে তারা সুন্দর স্বাস্থ্যে এবং আনন্দে বেঁচে থাকতকিন্তু তা সত্বেও  পৃথিবীর অধিবাসীরা একদিন হয়ে পড়ল অসন্তুষ্ট, শয়তান এবং অসুস্থ
কোনও একদিন একজন মানুষ হারিয়ে ফেলল তার দৃষ্টি। সে হল প্রথম অন্ধ মানুষ। যখন তার খিদে পেত, চোখে দৃষ্টি না থাকার ফলে, সে জানতই না কিভাবে আকাশের টুকরো ছিড়ে খেতে হয়। 

রাগের চোটে সে মাটি থেকে কুড়িয়ে নিল একটি কোদাল, যা দিয়ে সে তার ফুলের বাগানটি চাষ করত এবং সেটাকে আকাশের দিকে ওঠালো। কিন্তু যেহেতু সে ছিল নিতান্তই আনাড়ি, তাই কোদাল দিয়ে সে আকাশটাকে টুকরো করতে পারল না।

খিদের চোটে সে সব গভীর চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলসে নিজেকে বলল, ‘এসো, আমরা একটা আগুন জ্বালাই। একটি বিশাল আগুন যা দিয়ে আমার চোখের অন্ধকার রাতকে আমি আলোয় ভরিয়ে দেব। আগুন জ্বলে উঠল। তার লেলিহান শিখা আকাশে চড়ল। উয়েন্দেকে দগ্ধ করলআগুনের কামড়ে আকাশ পিছু হটলো। ব্যাথা কাতর হয়ে অনেক উপরে উঠে গেল।

কিন্তু অন্ধটি আর কিছুই স্পষ্ট দেখতে পেলনা । কোনো খাবার আর তার জুটলোনা। যে মানুষজন কুড়োল দিয়ে আকাশকে আহত করেছে, আঘাতে যারা ক্ষতবিক্ষত  করেছে, আগুনে পুড়িয়েছে, তাদের দিকে উয়েন্দে তাকালেন। তিনি তার সাথে তাদের নিলেন , তাদের নাগাল থেকে অনেক দূরে উপরে নিয়ে এলেন।  তার মানবসন্তানদের দেহ থেকে বহু দূরে সরিয়ে নিলেন। 

এই কারনে এখন আকাশ খাবার জন্য মানুষকে তার দেহ ত্যাগ করতে হয়। সেখানে পৌঁছাতে গেলে অস্ত্র ছাড়া যেতে হয়। কোদালকে বাদ দিতে হয়।  আগুনকে পরিত্যাগ করতে হয়।  আর তার নিজের আত্মার অদৃশ্য ডানায় ভর করে আকাশে যেতে হয়।

Comments

Popular posts from this blog

জুগুলুগুবাম্বা, চতুর্থপর্ব

ব্যবসায়ীরা  ব্যবসায়ী? সেরকম কোন কথাই ছিল না সেযুগে। বেচা-কেনা এবং টাকা রোজগারের জন্য একজন লোক তার মগজের চিন্তাকে রূপ দিয়ে তার পুরো পরিবারকে গোটা দুনিয়ার কাছে পাঠিয়েছিল। এই কাহিনীটি বেশ লম্বা। শোনো তবে...  নিজ্যেরএ (নাইজিরিয়ায়) কোন এক কৃষকের একটি মেয়ে ছিল। তার স্বভাব ছিল মিষ্টি, চামড়া ছিল সিল্কের মত, চোখ কালো হরিণের মত। এত সুন্দর হাসিখুসি শিশু যে ভাবাই যায় না। কৃষক মেয়েকে কোন গরিব লোকের হাতে তুলে দিতে চাইত না। একজন বড়লোক জামাই পাওয়ার জন্য সে কি করেছিল সেই গল্পটা শোন তাহলে...  সে তার কন্যাকে একটা নাম দিয়েছিল। কিন্তু কেউই, কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোক এমনকি কোন প্রাণীও জানত না সেই নাম।  এরপর সে বলল, যে আমার মেয়ের নাম খুঁজে বার করতে পারবে, সেই হবে আমার ভাবী জামাই। সমস্ত দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে দলে দলে যুবকেরা কৃষকের জামাই হওয়ার আকাঙ্খায় কন্যা ও তার পিতার জন্য উপহার বগলদাবা করে একে একে হাজির হতে লাগলো। সারাদিন ধরে তাদের চলল মদ্যপান আরা হাসাহাসি। পৃথিবীতে জন্মাবার পর যতগুলি নাম তারা শিখেছে এক এক করে সবগুলি তারা বলে গেল। একজন যখন বলছে তখন অন্যরা মজায় হাসিতে গড়িয়ে পড়ছে একে অন্যের ঘাড়ে। কিন্তু ক

জুগুলুবাম্বা তৃতীয় পর্ব

কুকুরেরা কেন মানুষের বন্ধু হল সুদানের গল্পদাদু তালিদালা তাঁর পশমের টুপিটা তুলে তাঁর হাত মাথার উপর ধীরেসুস্থে বুলিয়ে দিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন। সামনের উঠানে পায়রার মতো সুদানি ছোট ছোট পাখি লাফালাফি করে খেলছিল। তাদের মধ্যে একটা পাখি লাফ দিয়ে ছোট শস্যদানার গামলার উপর বসে মহানন্দে মলত্যাগ করল। ওদিকে ছাই রঙ্গা পোশাক পরে তাঁর বৌ মজাছে শস্যদানা চিবাচ্ছিল। মলত্যাগ করে পাখিটা মাটিতে পা ফেললো। লালটুপি পরা মাথাটি চারদিক ঘুরে দেখে একটা গাছের ডালে উড়ে গেল। অন্যান্য পাখিগুলিও তাঁর দেখাদেখি পেছন পেছন গাছের দিকে উড়ে গেল।

জুগুলুগুবাম্বা

কালো মানুষের দেবতা উয়েন্দে পাখিদের ডেকে বললেন, ‘তোমরা বেশ বন্ধনহীন জীবন কাটাচ্ছ। আর সব সময় চাইলেই শস্যদানা খুঁজে পাচ্ছ। পোকামাকড় খেয়ে বেশ তো মজায় আছো। তোমরা তোমাদের ঠোঁটে নিজেদের গান নিয়ে এসেছো। মাটিতে থাকার চাইতে আকাশেই তো বেশি সময় তোমরা উড়ে বেড়াচ্ছ স্বপ্নের ভেলা ভাসিয়ে'।