আকাশের কিংবদন্তী
এমন
একদিন ছিল যখন আকাশকে হাত দিয়ে ছোঁয়া যেত। তখন আকাশ ছিল মাটির কাছাকাছি। ঠিক দেবতা
উয়েন্দের মত। কারণ, আকাশ আর উয়েন্দে তো একই মানুষ। যে জগত তিনি তৈরী করেছেন
উয়েন্দে ছিলেন তার খুবই কাছে।
যেমনভাবে
অন্য প্রাণী এবং গাছপালা, তরুলতা পৃথিবীর জিনিসপত্রের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে,
মানুষও তেমনি আকাশ খেয়ে বেঁচে থাকত। তার আত্মা এবং পেটের যখন খিদে পেত, তখন সে হাত
উপরে তুলত, এক টুকরো আকাশ ছিঁড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলত। তার ফলে তারা সুন্দর স্বাস্থ্যে
এবং আনন্দে বেঁচে থাকত। কিন্তু তা সত্বেও
পৃথিবীর অধিবাসীরা একদিন হয়ে পড়ল অসন্তুষ্ট, শয়তান এবং অসুস্থ।
কোনও
একদিন একজন মানুষ হারিয়ে ফেলল তার দৃষ্টি। সে হল প্রথম অন্ধ মানুষ। যখন তার খিদে
পেত, চোখে দৃষ্টি না থাকার ফলে, সে জানতই না কিভাবে আকাশের টুকরো ছিড়ে খেতে হয়।
রাগের
চোটে সে মাটি থেকে কুড়িয়ে নিল একটি কোদাল, যা দিয়ে সে তার ফুলের বাগানটি চাষ করত
এবং সেটাকে আকাশের দিকে ওঠালো। কিন্তু যেহেতু সে ছিল নিতান্তই আনাড়ি, তাই কোদাল
দিয়ে সে আকাশটাকে টুকরো করতে পারল না।
খিদের
চোটে সে সব গভীর চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। সে নিজেকে
বলল, ‘এসো, আমরা একটা আগুন জ্বালাই। একটি বিশাল আগুন যা দিয়ে আমার চোখের অন্ধকার
রাতকে আমি আলোয় ভরিয়ে দেব। আগুন জ্বলে উঠল। তার লেলিহান শিখা আকাশে চড়ল। উয়েন্দেকে
দগ্ধ করল। আগুনের কামড়ে আকাশ পিছু হটলো। ব্যাথা কাতর হয়ে অনেক উপরে
উঠে গেল।
কিন্তু
অন্ধটি আর কিছুই স্পষ্ট দেখতে পেলনা । কোনো খাবার আর তার জুটলোনা। যে মানুষজন
কুড়োল দিয়ে আকাশকে আহত করেছে, আঘাতে যারা ক্ষতবিক্ষত করেছে, আগুনে পুড়িয়েছে, তাদের দিকে উয়েন্দে
তাকালেন। তিনি তার সাথে তাদের নিলেন , তাদের নাগাল থেকে অনেক দূরে উপরে নিয়ে এলেন।
তার মানবসন্তানদের দেহ থেকে বহু দূরে
সরিয়ে নিলেন।
এই
কারনে এখন আকাশ খাবার জন্য মানুষকে তার দেহ ত্যাগ করতে হয়। সেখানে পৌঁছাতে গেলে
অস্ত্র ছাড়া যেতে হয়। কোদালকে বাদ দিতে হয়।
আগুনকে পরিত্যাগ করতে হয়। আর তার
নিজের আত্মার অদৃশ্য ডানায় ভর করে আকাশে যেতে হয়।
Comments
Post a Comment